Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Youtstory

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

ADVERTISEMENT
Advertise with us

পিটিয়ে পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন অন্না হাজারে

এক পুলিশকর্মীর লাঠি দিয়েই তাকে এত পিটিয়েছিলেন অন্না হাজারে যে তার মাথায় আটটা সেলাই পড়েছিল। তিন মাস গা ঢাকা দিতে হয়েছিল অন্নাকে। সে গল্প কি আপনি জানেন? আজ তৃতীয় পর্ব।

পিটিয়ে পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন অন্না হাজারে

Tuesday August 23, 2016 , 4 min Read

অন্নাকে মামা মুম্বাই নিয়ে গিয়েছিলেন সে কথা আগেই আপনাদের বলেছি। মুম্বাইয়ে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশুনো করেছেন। ঘরের আর্থিক পরিস্থিতির কারণে এবং পারিবারিক নানান সমস্যার জন্যে অন্নাকে খুব অল্প বয়স থেকেই কাজ করতে হয়। মুম্বাইয়ে ফুল বিক্রি করতেন অন্না। হঠাৎ কেন ফুল বেচতে শুরু করলেন, সে কথা বলতে গিয়ে অন্না আমাদের জানান মুম্বাইয়ে থাকার সময় তিনি স্কুল ছুটির পর একটি ফুলের দোকানে গিয়ে বসতেন। খুব কাছ থেকে মালাকারদের মালা গাঁথা দেখতেন। দেখতে দেখতেই শিখে গিয়েছিলেন ফুলের মালা গাঁথার কাজ। তাছাড়াও তিনি তখন দেখেছেন মালিক মহাশয় ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাঙ তুলে বসে থাকে আর পাঁচ পাঁচটা শ্রমিক খেটে মরে। এই দেখে অন্নার মনে হয়েছিল এই ব্যবসায় উন্নতি আছে। তবে দোকান দিলে তবেই হবে উন্নতি। অন্না অবশ্য এখন বলেন, ফুলের কাজ সাত্ত্বিক কাজ। ফুল ঠাকুরে পায়ে যায়, ফুলের মালায় ঠাকুরকে সাজানো হয়। ফলে ফুলের ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

মুম্বাই অন্নার জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। এক দিক থেকে বলতে গেলে গ্রামের সিধে সাধা কিষণ বাবু রাও হাজারে মুম্বাইয়ের হাওয়া বাতাসেই অন্না হাজারে হয়ে উঠেছিলেন। মুম্বাইতেই প্রথম সমাজকর্মী এবং আন্দোলনকারী হয়ে ওঠেন। সেই কৈশোরেই অন্না অন্যায় অবিচার দেখলে গর্জে উঠতেন। বয়স অল্প হলে কী হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার সময় অন্নার আচরণ এবং মেজাজ দেখেই মানুষ তাঁকে নেতা ঠাওরাত। সাহায্য পেতে আসা শুরু করে দিলেন পীড়িতের দল।

অন্না যেখানে ফুল বিক্রি করতেন সেখানে অনেক হকার, চাষি ফল, ফুল সবজি নিয়ে বসত। পুলিশ সবসময় এসে এই সব গরিব গুর্বো মানুষগুলোকে বিরক্ত করত। টাকা চাইত। তোলাবাজি করত। এর বিরোধিতা করতেন অন্না। অন্নার বিরোধ দেখে গরিব মানুষ তাঁকে তাদের নেতা হিসেবে মনে করতে শুরু করল। অন্না পুলিশকে বোঝাত তোলাবাজি ঠিক কাজ নয়। কিন্তু পুলিশের সেসব এক কান দিয়ে ঢুকত আর অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে যেত। মায়ের শিক্ষা ছিল। যত টুক সম্ভব দরিদ্রের সাহায্য কোরো। রক্ত গরম ছিল। বয়স অল্প ছিল। অন্যায় সহ্য করার অভ্যাস ছিল না। দেখতে দেখতেই অন্না নেতা হয়ে উঠলেন। পুলিশের হপ্তাউসুল করা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান সেনাপতি।

এই লড়াই চলতে চলতে এমন একটি ঘটনা ঘটে যার জন্য অন্নাকে মুম্বাই শহর ছাড়তে বাধ্য হতে হয়। একদিন এক ফলওয়ালা তোলার টাকা না দেওয়ায় এক পুলিশ তাকে বেধড়ক পিটিয়ে ছিল। সেই ফলওয়ালা তাদের নেতা অন্নার কাছে এসে সেই অন্যায়ের কথা জানান। অন্না সেই আহত লোকটিকে নিয়ে সেই পুলিশ হাবিলদারের কাছে গিয়ে উপস্থিত হন। ওই হাবিলদারকে বলেন গরিব লোককে এভাবে বিরক্ত করা চলবে না। অন্নার গলার শব্দের চেয়ে উঁচু স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে ওই পুলিশ। অন্নাকে চোখ রাঙাতে থাকে। ওই পুলিশের হাতে লাঠি ছিল। সেই লাঠি টেনে নেন অন্না। পুলিশটাকে রাস্তায় ফেলে পেটান। মাথায় গভীর আঘাত লাগে। আটটা সেলাই করতে হয়। একথা বিশ্বাস করতেই কেমন লাগে যে অন্না হাজারে, যিনি অহিংসার প্রতিমূর্তি, অনশন করে গোটা দেশের পরিবর্তন এনেছেন তিনি নিজে মুখে স্বীকার করছেন যে তিনি কাউকে মেরেছেন শুধু নয় মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে আটটা সেলাই দিতে হচ্ছে। এবং যাকে তাকে মারছেন না খোদ পুলিশকে পুলিশের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন।...

অন্না বলছেন, “আসলে হিংসা হয়ে গিয়েছিল। আর ওই সময় আমার জীবনে মহাত্মা গান্ধী ছিলেনই না। আমি ছত্রপতি শিবাজিকে দেখছিলাম। তাঁর হিসাবে তো রাজা কিংবা মন্ত্রী ভুল করলেও তার হাত কেটে নেওয়াই ন্যায় ছিল।”

পুলিশকে মারার অপরাধে অন্নার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হয়ে গেল। অন্না গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গেলেন। কখনও এখানে কখনও ওখানে। টানা তিন মাস রীতিমত আন্ডারগ্রাউন্ড। ফুলের দোকানের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল। ফল বিক্রেতা ওই লোকটা তো অন্নার কোনও আত্মীয় ছিলেন না তবু তাঁর সঙ্গে হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা অন্নার কাছে কর্তব্য ছিল। আর সেই কর্তব্যই যেন তিনি পালন করেছিলেন।

কিন্তু পালিয়ে বেড়ানোর দিনগুলি ছিল বিভীষিকা। অন্না বলছিলেন, “এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম। এই বুঝি পুলিশ এলো। কখনও রেল স্টেশনে কখনও বন্ধুর বাড়ির ছাদে কখনও অপরিচিত লোকের বাড়ির বারান্দায় রাত কাটাতাম। কিন্তু পুলিশ ধরতে পারেনি।” এরকম সময়েই অন্না জানতে পারেন যে ভারত সরকার যুবকদের সেনাবাহিনীতে নিচ্ছে। অন্না সেনায় নাম লেখাতে চান। তিনি তখন সৈনিক হতে চান। এভাবেই অন্না সেনা বাহিনীতে ভর্তি হয়েও যান। এবং এভাবেই পুলিশে ঝামেলা থেকেও মুক্তি পান।

কিন্তু কথা হল মুম্বাই শহর শোষিত এবং নিপীড়িত মানুষের নেতা বানিয়ে দিয়েছিল অন্নাকে। তিনি সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। পুলিশ পেটানোর ঘটনার আগেই অন্না মুম্বাইয়ে ভাড়া বাড়িতে ভাড়াটেদের ওপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধেও জোর লড়াই করেছিলেন। সমমনস্ক যুবকদের নিয়ে দল পাকিয়েছিলেন। সংগঠন করেছেন। যে সব গুণ্ডারা ভাড়াটেদের কাছ থেকে তোলাবাজি করত তাদের ডেরায় গিয়ে রীতিমত হুমকি দিয়ে এসেছেন অন্না হাজারে। এতটাই সেই হুমকির পাল্লা যে মুম্বাইয়ের বড় বড় গুণ্ডাও লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। তাঁর মেজাজ, দাপট, হুঙ্কারের কথা যত জানছি ততই আশ্চর্য লাগছে। অন্না হাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে আসা তথ্য গুলোর সঙ্গে আজকের শান্ত শান্তির দূত অন্নার যেন কোনও মিলই নেই। কিন্তু এখনও অন্না গর্বের সঙ্গে সেই সময়ের কথা স্মরণ করেন এবং বলেন, “আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই গুণ্ডাদের বলেছিলাম, গুণ্ডামি আমিও জানি। এসব শুনেই ঘাবড়ে গিয়েছিল ওই সব পেশাদার বদমাইশেরা।”